১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ২:১৪

তিতাস একটি নদীর নাম

লেখক
মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

।।নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাসের ধারায় অসাধারণ সৃষ্টি তিতাস পাড়ের সন্তান অদ্বৈত মল্লবর্মণের(১৯১৪-১৯৫১) তিতাস একটি নদীর নাম(১৯৫৬)। নদী ও মানুষের চিরায়ত যুগলবন্দি এ উপন্যাসে তিনি সমাজের নিম্ন শ্রেণির মালো সম্প্রদায়ের জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতিকে অঙ্কনের পাশাপাশি অবহেলিত নারী সম্প্রদায়ের জীবনালেখ্য তুলে ধরেছেন। তিতাস তীরবর্তী জেলে ও কৃষিজীবীদের জীবনযাত্রা, আচার-ব্যবহার, সভ্যতা-সংস্কৃতি, শোষণ-বিড়ম্বনা, মিলন-বিরহ, দুঃখ-উল্লাস-দ্রোহ এককথায় সমাজের অতীত ও বর্তমান প্রাণস্পন্দনের হদিস মেলে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসে।মালো জীবনের অতল থেকে লেখক যে অরূপ রতন তুলে এনেছেন তা বহু মূল্যবান।

দারিদ্র্যে দীর্ণ হতশ্রী এক মালো পরিবারের অদ্বৈত মল্লবর্মণ জন্মেছিলেন।ফলে মালো জীবনের প্রকৃতি ও সমাজ বৈশিষ্ট্য তাঁর ভালো করে জানা ছিল।কারণ জলের মধ্যে মাছের মতোই তিনি মালো সমাজে বেড়ে উঠেছিলেন। তাই তিতাসতীরের মালোজীবনের কথাচিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে তাঁকে কৃত্রিম কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় নি। তিতাস নদীর প্রবাহকে ঘিরে এ উপন্যাসের বয়ে চলা। সুবল, বাসন্তী, কিশোর, তিলক চাঁদ, অনন্তর মা এ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। সাথে বাকি সব চরিত্রের উপস্থিতি যেন শুধুই তিতাসকে বইয়ের পাতায় জীবন্ত করে তুলবার জন্যই। তিতাসের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা কিছু গ্রাম, কিছু পরিবার আর কিছু মানুষ জীবনের প্রতিটা বাঁকেই যেন তিতাসের হাতেই নিজেদের সমর্পণ করে দেয়। তাদের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, হাসি-খেলা, আনন্দ-উৎসব, বাঁচা-মরা সবকিছুই যেন তিতাসকে ঘিরেই! তিতাসের দর্প থাকলে তারাও প্রবল দর্পে বাঁচে, তিতাস ধুঁকতে থাকলে তারাও ধুঁকতে থাকে আর তিতাস শুকায়ে গেলে সেসব মানুষ গুলোর প্রাণরসও যেন শুকিয়ে যায়। তাই “তিতাস একটি নদীর নাম” কোন উপন্যাস না। “তিতাস একটি নদীর নাম” একটি ইতিহাস। তিতাস নদীর ইতিহাস। মালোপাড়ার ইতিহাস। কৃষকদের ইতিহাস। হিংসা-বিদ্বেষ, সুখ-দুঃখের ইতিহাস। একটি বিস্তৃত জনপদের ইতিহাস।।

(তিতাস একটি নদীর নাম, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, প্রকাশক-বাংলা একাডেমি)

-তাসফিয়া তাসমিন মিশু


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো