১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, রাত ৩:৩৫

সংশপ্তক

লেখক
বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১

।।বিভাগোত্তরকালের বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের (১৯২৬-১৯৭১) অনবদ্য শৈল্পিক সৃজনা “সংশপ্তক” (১৯৬৫)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর কাল থেকে শুরু করে বিভাগোত্তর কাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সামাজিক রূপান্তরের বস্তুনিষ্ঠ কাহিনি “সংশপ্তক।” জীবনকে বহু কৌণিকভাবে অবলোকন করতে গিয়ে শহীদুল্লা কায়সার সমাজ বিবর্তনের সমগ্র প্রান্ত স্পর্শ করেছেন।বাকুলিয়া-তালতলির সংস্কৃতি-সংস্কার, ঔপনিবেশিক শাসন- শোষণের চিত্র, ইংরেজদের ভেদনীতি,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা,পাকিস্তান আন্দোলন,আন্দোলনের নেতিবাচক পরিণাম অত্যন্ত নিরাসক্তভাবে উপস্থাপন করেছেন শহীদুল্লা কায়সার। উপন্যাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে দেখতে পাই, বিশ্বযুদ্ধ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে রমজান ও রামদয়ালের মতো গ্রামীণ মধ্যবিত্তরা কিভাবে চোরাকারবারি ও মজুতদারী করে অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে। সৈয়দ পরিবার কলকাতায় চলে গেলে গ্রামের সম্পত্তির দেখাশোনার ভার অর্পিত হয় ফেলু মিঞার উপর। ফেলু মিঞা নিরীহ-নিঃস্ব গ্রামবাসীর কাছে খাজনা দাবি করে। মালু মিঞাবাড়ি ছেড়ে গনি বয়াতির কাছে আশ্রয় নেয়। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।এর প্রভাব গ্রামে পড়ে। যুদ্ধের মধ্যে রমজান ব্যবসায় নেমে পড়ে। সেনাছাউনিতে খাদ্য এবং নারী যোগান দেয় সে।মালু রামদয়ালের রেশনের দোকানে কাজ করত।একদিন মালো বস্তা ভর্তি টাকার সন্ধান পায়।কিন্তু এসব টাকা যুদ্ধের বাজারে চোরাকারবারি, মজুদদারীর টাকা। অন্যদিকে জাহেদ দেশের কাজে মনোনিবেশ করে। জাহেদের সঙ্গী হয় মালু। তারা ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে। এ উপন্যাসে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার পরিচয় পাই। কলকাতায় মেসে থাকার জন্য মালুকে হিন্দু পরিচয় দিতে হয়েছে। কলকাতায় মালু আর রাকিব সাহেবকে মেরে ফেলার জন্য হিন্দুরা আক্রমণ করে তাদের মেসে। কোনো রকম পালিয়ে যায় তারা। এছাড়া হিন্দুবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। “সংশপ্তক” উপন্যাসে গোটা চল্লিশের দশকের সবগুলো উপসর্গের চিত্র এসেছে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, চরম দুর্ভিক্ষ, মর্মান্তিক দেশান্তরি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশভাগ। উপন্যাসে ঔপন্যাসিক জাহেদের পরিণতি গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে দেখিয়েছেন।পুলিশ ধরে নিয়ে যায় জাহেদকে।যাবার সময় চিৎকার দিয়ে বলে-  “চিন্তা করিসনে রাবু,  আমি ফিরে আসবো।   আমি আসবো।”

 জাহেদ পকেট থেকে রুমালটা বের করে নিশানের মত উড়িয়ে দিলো। ওই নিশানকে আমরা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পতাকা বললে অত্যুক্তি হবে না। এভাবে “সংশপ্তক” উপন্যাসে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতিধ্বনি স্পষ্টতই বেজে উঠেছিল।।

(সংশপ্তক,শহীদুল্লা কায়সার,প্রকাশক-চারুলিপি প্রকাশন)

-তাসফিয়া তাসমিন মিশু


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো