কৃষ্ণকুমারী
বাংলা নাট্য সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজিক নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’। মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইতিহাসের তথ্যসমূহকে অক্ষুণ্ন রেখে ঐতিহাসিক নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’ রচনা করেন।ভীমসিংহের ট্রাজেডি, দেশের জন্যে কৃষ্ণার আত্মত্যাগ, শোকে কাতর রাজমহিষী অহল্যা দেবীর মৃত্যু, কৃষ্ণকুমারীর প্রেমপিয়াসী মানসিংহ ও জগৎসিংহের দ্বন্দ্ব, কৃষ্ণকুমারীর মনের সুপ্ত বাসনা ও ইতিহাসের সত্য সব মিলেই ‘কৃষ্ণকুমারী’ হয়ে উঠেছে ঐতিহাসিক রোমান্টিক ট্রাজিক নাটক।
উদয়পুরের রাজা ভীমসিংহের কন্যা রাজকুমারি কৃষ্ণকুমারী-র করুণ জীবননাট্যের কাহিনী এই নাটকটি।ভীমসিংহের একমাত্র যুবতী কন্যা কৃষ্ণকুমারী। সে অতিশয় রূপবতী।উদয়পুরের রাজা জগৎসিংহের অনুচর ধনদাস টাকার লোভে তার কাছে কৃষ্ণকুমারীর ছবি বিক্রি করে এবং রাজাকে কৃষ্ণার দিকে ধাবিত করে। রাজার পক্ষ থেকে ধনদাস ভীমসিংহের কাছে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে যায়। কিন্তু জয়সিংহ এর রক্ষিতা বিলাসবতী তাকে ভালবাসে। সে কৃষ্ণাকে বিয়ে করবে শুনে বিলাসবতী কেঁদে বুক ভাসায়। এ কথা জানতে পারে তার সখী মদনিকা। এবং সে কৌশল করে মরুদেশীয় রাজা মানসিংহের কাছে পত্র পাঠায় এই বলে, কৃষ্ণা মানসিংহকে ভালবাসে। জয়সিংহ জোর করে কৃষ্ণাকে বিয়ে করতে চায়। মানসিংহ যেন তার হাত হতে কৃষ্ণাকে রক্ষা করে।অন্যদিকে মদনিকা ছদ্মবেশে হাজির হয় কৃষ্ণার কাছে। এবং নিজেকে মানসিংহের দূতী বলে পরিচয় দেয়। সে তাকে এক পুরুষের চিত্র দেখিয়ে বলে এটা মানসিংহ। মানসিংহ তাকে বিয়ে করতে চায়। ছবি দেখে কৃষ্ণা পছন্দ করে।এদিকে ভীমসিংহ ধনদাস এর কথা শুনে জয়সিংহ ও কৃষ্ণকুমারীর বিয়ে দিতে রাজি হয়। তখন মরুদেশীয় রাজা হতে খবর আসে। রাজা এটাও জানতে পারেন কৃষ্ণা মানসিংহতে অনুরক্তা। এটা জেনে তিনি ধনদাস কে ফেরত পাঠান।
এতে জয়সিংহ রাগান্বিত হয়ে আবার খবর পাঠান যদি কৃষ্ণাকে তার সাথে বিয়ে দেওয়া না হয়, তবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করবে। আবার মানসিংহও এই হুমকি দেয়। ভীমসিংহ বুঝতে পারেন, তার মেয়েকে যে রাজার কাছেই বিয়ে দেন না কেন অন্য রাজা যুদ্ধ ঘোষনা করবেন। এমন অবস্থায় যুদ্ধ ঘোষনা দিলে তিনি তা রুখে দাড়াবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন না। কেননা তার রাজ্যভাণ্ডার রিক্ত। তিনি এক অসহায় রাজা এবং পিতা হয়ে মুহ্যমান হন।কীভাবে পরিত্রাণ পাবেন তিনি এই বিপদ থেকে!? কৃষ্ণার মৃত্যু ব্যতিত এই সমস্যার সমাধান নেই।অবশেষে কৃষ্ণার আত্মহননের মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সমাধান ঘটে।
(কৃষ্ণকুমারী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত , প্রকাশক : সালাউদ্দিন বইঘর)
-তাসফিয়া তাসমিন মিশু