১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, রাত ১২:২৮

পথের পাঁচালী

লেখক
বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১

প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস “পথের পাঁচালী।”

সামাজিক চিত্রসৃষ্টি দূর অতীতের সাথে পল্লি সমাজের জীবনের যোগ দিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় উপন্যাসের শুরু করেন। গ্রামীণ সমাজের জীবনযাপন রীতি, আচার-ব্যবহার, পল্লিপথ, বন-বাদাড়, মাঠ-ঘাট, নদী-প্রান্তর, ফুল-পাখি প্রভৃতির যে জীবন্ত ছবি তিনি এঁকেছেন তার স্থান অতুলনীয়। এখানে প্রকৃতিই শুরু আবার প্রকৃতিই শেষ।

এই উপন্যাসের প্রথম অংশে আমরা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি বাল্যবিবাহ ও যৌতুককে প্রকট আকার ধারণ করতে দেখি। ইন্দিরঠাকুরনের বিয়ে অল্পবয়সে এমনই এক লোকের সাথে দেয়া হয়, যে বেশি যৌতুকের লোভে অন্যত্র বিয়ে করেন এবং আর কখনও ফিরে আসে না। তখন আয়হীন ইন্দিরঠাকুরনের স্থান হয় তার বাবার বাড়িতে, এবং তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় হরিহরের বাড়িই তার স্থান হয়। সেখানে প্রতিমুহূর্তে তাকে মনে করিয়ে দেয়া হত যে সে একজন আশ্রিতা ছাড়া আর কেউ নয়। সে প্রায়শই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত, কিন্তু দিনশেষে তার পথ এসে শেষ হত হরিহরের বাড়িতেই। একবার ঘটনাক্রমে বাড়ি থেকে তাকে একেবারে বের করে দেয়া হয় এবং মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের ইতি ঘটে।

এই উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশ ‘আম আঁটির ভেঁপু’-এ অত্যন্ত সুচারুভাবে হরিহরের সন্তানদ্বয়- বড়মেয়ে দূর্গা ও ছোট ছেলে অপুর টক-মিষ্টি সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। দূর্গা একপর্যায়ে অপুকে মারে, কারণ সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি করে আম খাওয়ার ঘটনা বলে দেয়। এই কারণে তাকে প্রতিবেশীর কথাও শুনতে হয়। রাগের মাথায় দুর্গার মা সর্বজায়া ওকে বকাবকি করেন। উপন্যাসের এক পর্যায়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের শেষ পর্যায়ে এসে দুর্গা মারা যায়।

উপন্যাসের শেষ অংশ ‘অক্রুর সংবাদে’ চিরাচরিত বাংলার বড়লোক-গরিবের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। লেখক সাফল্যের সাথে দেখিয়েছেন, যে একজন ব্রাক্ষ্মণ নারীর(সর্বজয়া) কি অবস্থা হয়, যখন অর্থের জন্য তাকে কাজের লোকের কাজ করতে হয়। দুর্গার মৃত্যুর পর তারা গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। সেখানে এক পর্যায়ে জ্বরে স্বামী হরিহরও মারা যায়। তার চোখের অশ্রু মোছার জন্যও কেউ ছিল না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়। সাহায্যের হাত কেউ বাড়ায় না। অবশেষে সে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ছেলে অপুকে নিয়ে তার নিজ গ্রাম নিশ্চিন্দিপুরের পথে রওনা হয়। কিন্তু সে তার সঠিক পথ খুঁজে পায় না।জীবনের আদি অন্তহীন, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাঘেরা এক বিরাট ও বিস্তৃত পথের পরিচয়ই ‘পথের পাঁচালী’র মুখ্য উপকরণ।

(পথের পাঁচালী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক : রাবেয়া বুক হাউস)

-তাসফিয়া তাসমিন মিশু


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো