মহিষকুড়ার উপকথা
অরণ্যঘেরা মহিষকুড়া গ্রামকে কেন্দ্র করে “মহিষকুড়ার উপকথা” উপন্যাসের কাহিনি সংঘটিত হয়েছে। উপন্যাসের কথাবস্তুতে রয়েছে আদিম কৌম জীবন ও আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার দ্বন্দ্ব। উপন্যাসটির অন্যতম প্রধান চরিত্র আসফাক।
মহিষকুড়া গ্রামে জাফরুল্লা সামন্ত প্রভুদের প্রতিনিধি একটি চরিত্র। সামন্ত শ্রেণির অপর একজন প্রতিনিধি ‘বুধাই রায়’। যার কারণে বাবার মৃত্যুর পর আসফাককে ঘর ছাড়তে হয়। জাফরুল্লা ‘কমরুণ’কে সহজেই গ্রহণ করতে পারে – আসফাকের সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও। কমরুণ ছিল একসময়ে আসফাকের ‘বাউদিয়া’ প্রেমিকা। কমরুণের স্বামীর মৃত্যু হয় বসন্ত রোগে। কমরুণের সঙ্গে তারপর ঘটনাচক্রে পরিচয় ও প্রণয়ের সম্পর্ক হয় আসফাকের।
এ উপন্যাসে বিভিন্ন লড়াই দেখানো হয়েছে।বন ও ক্ষেতের লড়াই, আধিয়ার ও গিরিগৃহস্থের লড়াই, আসফাক ও জাফরুল্লার লড়াই, সামন্ত ও আধুনিক সমাজের মধ্যকার লড়াই। বন ও ক্ষেতের মধ্যে অবিরাম লড়াই চলতে থাকে। বন দখল করে মানুষ তার লাঙ্গল-ট্রাক দিয়ে, অন্যদিকে বনও তার সমস্ত শক্তিমত্তা দিয়ে ক্ষেত প্রতিরোধ করতে চায়। একবার বন জিতে তো আরেকবার ক্ষেত জয়ী হয়। এ দ্বৈরথে অধিকাংশ সময়ই জিতে যায় ক্ষেত, লাঙ্গল, মানুষ। এই মানুষ, ক্ষমতাবান জাফরুল্লার মতো গুটিকতক মানুষ।
জাফরুল্লার সবচেয়ে ছোট বিবি কমরুনের সাথে আসফাক ঘর-সংসার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আসফাকের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় না। অথচ কমরুন বিবিকে সে-ই এই বাথানে নিয়ে এসেছে।
জাফরুল্লার ক্ষমতার সাথে সে পেরে ওঠে না। নিজের ঔরসের ছেলে মুন্নাফকে সে তার নিজের ছেলে হিসেবে দাবি করতে পারে না। মুন্নাফও মালিকের মতো আচরণ করে। ‘মিঞা সাহেব’ সম্বোধন পরিবর্তন করে আসফাকের নাম ধরে ডেকে মালিক জাফরুল্লা। বনের মালিকও সে। ফলে ষাঁড় হয়ে স্বাধীন হতে চাইলেও আসফাক কোনো আশা দেখে না। আসফাক স্বাধীনতা পায়নি। সারাজীবনের জন্য আবদ্ধ সে জাফরুল্লার বাথানে।
উপন্যাসের শেষের দিকে দেখা যায়, জাফরুল্লা ব্যাপারি একটা বিশাল ট্রাক নিয়ে আসে। বুনো মোষের জায়গা দখল করে আধুনিক কলের মোষ। আসফাক এই ট্রাকটাকে কলের মোষ হিসেবেই সম্বোধন করে। মানুষ সমান উঁচু কলের মোষের সঙ্গে কোনো মোষেরই লড়াই-জেতার ক্ষমতা হবে না। সে যতো দেখে ততোই অবাক হয়। এখানে, সেই মহিষকুড়া গ্রামের আধুনিকতার দিকে যাত্রা শুরু। গল্পেরও শেষ হয় এখানে।
আবার জাফরুল্লার ক্ষমতার কাছে আসফাক পরাজিত হয়। আসফাকের এই পরাজয় আসলে পুজিঁবাদী যান্ত্রিক সভ্যতার সভ্যতার কাছে আদিম কৌম জীবনের পরাজয়।
(মহিষকুড়ার উপকথা, অমিয়ভূষণ মজুমদার, প্রকাশক : মিথ প্রকাশনী)
-তাসফিয়া তাসমিন মিশু