১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, সকাল ৭:৩৫

কালো বরফ

লেখক
মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

বাংলাদেশের সাহিত্যে ব্যতিক্রমী ও প্রাতিস্বিক কথাশিল্পী মাহমুদুল হক(১৯৪০-২০০৮)।জীবন রহস্যময়তা, ব্যক্তি মানুষের ভাবনাজগতের নিঃসীম শূন্যতা মাহমুদুল হকের উপন্যাসের বিষয়বস্তু। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসে রয়েছে দেশ ও সমাজের নিগূঢ় প্রতিফলন। জন্মভূমি ও শৈশবের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যে নিঃসঙ্গতা ও বেদনাবোধ, সেই বেদনারই বাণীরূপ তাঁর “কালো বরফ” (১৯৭৭) উপন্যাস। এ উপন্যাসে প্লটের সুনিপুণ বিন্যাস, সংলাপ সৃষ্টি, চরিত্রের মনস্তত্ত্ব উন্মোচন, ভাষা ও অলংকারের ব্যবহার ঔপন্যাসিকের দক্ষ শিল্পীসত্তার পরিচয় বহন করে।

মাহমুদুল হক মূলত স্মৃতিতাড়িত শিল্পী।তিনি নিজেই দেশবিভাগের বাণে জর্জরিত।১৯৪৭ এর দেশবিভাগের কারণে মাহমুদুল হককে তার পরিবারসহ চলে আসতে হয় ঢাকায়।এরপর একের পর এক বিপদের সম্মুখীন হয়। নিজের ছিন্ন করে আসা অতীত, সম্পর্কের বন্ধনের বিচ্ছিন্নতা তার অন্তরে যে নিঃসঙ্গ বেদনার জন্ম দেয় তা “কালো বরফ” উপন্যাসে তুলে ধরেছেন।সংকেত ও ব্যঞ্জনার মাধ্যমে  উপস্থাপন করেছেন দাঙ্গা ও দেশভাগে বিক্ষত সমাজের ছবি। এ উপন্যাসে পোকার শৈশবের বেদনাবোধ এবং খালেকের বয়স্ক বিপন্নতার মূলে রয়েছে দেশভাগের রূঢ় বাস্তবতা। দেশভাগের পর কিশোর পোকাকে ছেড়ে আসতে হয় তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম,তার স্বদেশ।নতুন দেশে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতিতে স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে নিয়ে যখন সে মফস্বল শহরে অনিশ্চিত চাকরিতে কোনরকমে সংসার চালায়,তখনও শৈশব স্মৃতি তাকে করে রাখে উন্মনা ও উন্মূল। সে প্রভাব পড়ে দাম্পত্য সম্পর্কেও। বয়স্ক আব্দুল খালেকের শৈশব অভিজ্ঞতা অভিব্যক্ত হয়েছে তার স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে- ” সেই বোধ হয় প্রথম       তার ছিঁড়ে গেল সব কিছুর। সে তার  কখনো জোড়া  লাগলো না।”

সত্যিই জোড়া লাগেনি খালেকের মনের সে তার। খোকা থেকে খালেকের রূপান্তর প্রকৃতপক্ষে দেশভাগের পরিণামের অভিজ্ঞান।(কালো বরফ, মাহমুদুল হক, প্রকাশক-সাহিত্য প্রকাশ)

– তাসফিয়া তাসমিন মিশু


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো